'ভ' এ ভয়, ভ্যাকসিন আর ভালোবাসা।। ❤️

 এই অতিমারীর সময়ে চারপাশে প্রেম মরে যেতে দেখছি আকছার, দূরত্ব প্রেম, দেখা না হওয়া কিংবা একসাথে প্রয়োজনের বেশি সময় কাটাতে হচ্ছে বলে ভেঙে পড়ছে একের পর এক সম্পর্ক। আবার কেউ কেউ হয়তো গড়েও তুলছে কিংবা জড়িয়েও যাচ্ছে বেশি করে। তো আজ এরমই একটা জড়িয়ে পড়ার গল্প শোনাই, কিংবা সত্যি শোনাই।


দূরত্ব প্রেম দিয়ে শুরু হয়েছিল বলে করোনা, লকডাউন আমার প্রেম কাহিনীকে খুব একটা কাত করতে পারেনি। খুনসুটি, একে অপরকে সতর্ক বার্তা দেওয়া আর ঐ সব ঠিক হয়ে যাবে গোছের পজিটিভ বার্তা অনলাইনে ছড়িয়েই দিন কাটছিল। কিন্তু সব সতর্ক বার্তা কে মিথ্যে করে  অনেকের মতো আমিও করোনার প্রকোপে পড়েছিলাম, বেশ ছোট্ট করে.... মানে হসপিটাল অক্সিজেন কোনোটারই প্রয়োজন পড়েনি সে অর্থে, অনলাইন ডক্টরদের সুপরামর্শে আর মায়ের আদরে সপ্তাহ দুয়েকে ওষুধ খেয়ে সেরে উঠেছিলাম। কিন্তু ওই দু সপ্তাহে শারীরিক ক্ষতি কতটা হয়েছিল জানিনা, মানসিক লাভ হয়েছিল অনেকটা। ওই আরোই জড়িয়ে পড়েছিলাম আর কি! অফিসে থাকতেই একদিন খুব গলা আর গা হাত পা ব্যথা শুরু হয়, ও অনেকবার ফিরে আসতে বলছিল আমি পাত্তা না দিয়ে থেকে যাই আর রাতে বাড়ি ফিরে ধুম জ্বর আসে, ও ফোন করেছিল, জ্বরের ঘোর এ ও বুঝতে পারছিলাম মায়ের মতো ও ও ঠিক কতটা অসহায় বোধ করছে। নরমাল সর্দি জ্বর ভেবে ডাক্তার দেখাচ্ছিলামনা কিছুতেই সত্যি বলতে একটু ভয় ও পাচ্ছিলাম কিন্তু তার বিরাম নেই দূরে থেকেও ডাক্তারের নাম্বার জোগার করা এবং তার সাথে নিয়ম করে কন্সাল্ট করা, সবটাই নিজে করেছিল। খাওয়া দাওয়া ব্যায়াম সবটা সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছিল আমায়। ও চকলেট নিয়ে দেখা করতে এলেই অনেক জ্বর সেরে যায় আমার, সংক্রমণ ভুলে এবার ও আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই আসতে দিইনি। প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম তবু ঠিক করে সেরে ওঠার আগেই  একদিন অফিসে চলে গেছিলাম তারপর দেখেছিলাম বন্ধু প্রেমিক থেকে কিভাবে ভালোবাসার মানুষটা বাবার মতো হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে। সত্যি বলতে বাবা আমায় অল্পই বকতো, আর এখন তো বাবার বকা খাওয়ার সৌভাগ্য ও হয়না, তবু সেদিন মনে হয়েছিল এইত্ত বাবার মত কেউ তো আছে পাশে। 

এরপর ও শেষ না, এরপর আসে ভ্যাকসিন নেওয়ার গল্প, অফিস থেকে সবাই মিলে ভ্যাকসিন নিতে যাওয়া হবে। প্রথম বার বাড়ির লোক ছাড়া ইনজেকশনের ছুঁচ দেখার একটা ভয় তো ছিলই। আর মায়ের মত ও ও কন্টিনিউ বুঝিয়ে চলছিল এটা কোনো ব্যাপারই না। তারপর ভ্যাকসিন নেওয়া হল। আর তার প্রায় এক মাস পর জানতে পারলাম শরীরে যেটা বইছে সেটা করোনা প্রতিষেধকই নয়... অন্য কোনো এন্টিব্যাকটেরিয়াল ওষুধ কিংবা কোনো অজানা স্টেরয়েড। সবটা জেনেও ঘাবড়ে না যাওয়ার কারণ ও সেই ওরাই। মা আর ও মিলে আমার গায়ে যে যত্নের প্রলেপ দিয়ে রেখেছে, তা ভেদ করে কোনো খারাপ জাস্ট আসতেই পারেনা। সবশেষে কাল আমি ভ্যাকসিন নি, সত্যিকারের....

নিয়ম মেনে বিকেল গড়াতেই ধুম জ্বর আসে। নিজে ভুগেছিল বলে আমায় প্রায় পারলে দশ দিন আগে থেকেই প্যারাসিটামল খাইয়ে রাখতে চেয়েছিল। তবুও মাঝরাতে হ্যালুসিনেশন এ মায়ের সাথে সাথে যখন ওর মুখটাও ভেসে উঠছিল একটা পরম আত্মতৃপ্তি হচ্ছিল , সকালে মা বলছিল আমি সারারাত কি সব বির বির করছিলাম.... মনে নেই ওসব..... শুধু মনে হচ্ছিল মা বাবা রা আমাদের ছেড়ে যায়না কখনো, কারোর মধ্যে দিয়ে থেকেই যায় আমাদের সাথে।।

মহামারী আসুক, যাক শুধু ভালোবাসা গুলো থেকে যাক চারপাশে, এটাই প্রার্থনা।।


Comments

Popular posts from this blog

Sunday_Motivation... 🌻

নববর্ষ 🌸

প্রেমিকের গন্ধ