বিশ্বাসঘাতকতার স্কয়ারফিট... 🌃

এ শহরে ইতিউতি গজিয়ে ওঠা বহুতলের মত প্রতি স্কয়ার ফিটে একটা করে পরকীয়া গড়ে ওঠে রোজ। আমি বেসরকারি কোনো এক বাসের জানলার পাশের সিটে বসে পড়ে আসা বিকেলের আলোয় ওদের দেখি, আমার হেডফোনের শব্দ ছাপিয়ে কানে আসে ওদের কথোপকথন- 'এর পরের ফোন টা ঠিক কাল সকাল সাতটায় করব, তার আগে ফোন করার দরকার নেই,' অমুক রঙের সার্ট পড়ে, অমুক বাসস্ট্যান্ড আর তারপর অমুক রিসর্ট, অমুক কালো ঠান্ডা পানীয়র বদলে অমুক সাদা পানীয়ের আবদার...; কিংবা যে যার বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার আগে অটোর ব্যাকসিটে শেষ নিবিড়তাটুকু শুষে নেওয়া। আমি অবাক হয়ে দেখি,এই অতিমারীর সংকটেও মানুষ ভালোবাসছে, কিংবা ঠকাচ্ছে; বিশ্বাসঘাতকতা আর ভালোবাসার মাঝখানে ইদানিং আর কোনই পার্থক্য নজরে আসেনা আমার, শহরের অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইওভার গুলোর মতোই ভালোবাসাও যেন নিতান্ত অপ্রয়োজনীয়, সিঁড়ি বা লিফ্ট চেপে অনেক ওপরে ওঠার তাগিদে আর সময়ের অভাবে এখন ভালোবাসার অনেক মুখ, এক মুখ আর কতদিন ই বা সহ্য হয়। এখন তো ফ্লাইওভারের ও পৌরুষ পরীক্ষা হয়, ভালোবাসা তো তাও খুব ই সামান্য কেউ, তাই হয়তো সহজেই মুখ বদলে যায়।

অবশ্য আমার কিন্ত অঢেল সময়, সন্ধ্যের মুখে আমি বাস থেকে নেমে আসি, সুনসান এলাকার মাঝের হাঁটা পথটা ধরি, নীল, আকাশি বাড়িটার ছাদে কাকেদের আগামীকালের কর্মসূচির মিটিং বসেছিল, এখন ফেরার পালা, তাই কিছু ইতিউতি উড়ে বেড়ানো, ওই অফিস ফেরত গল্প আর কি, হয়তো। আমার বেশ মনে পড়ে ঠাকুরদার সেই ডকের পাশের পুরোনো বাড়িটার চার তলার ছাদে গিয়ে, ট্যাঙ্কির কল খুলে সারি দেওয়া জাহাজের দিকে তাকিয়ে থাকতাম ছোটবেলায়, মাথা ঝিম হয়ে আসত ভালো লাগায়, আজ ও হয়, আমার বাড়ির ছাদ থেকে দূরে কোনো বাড়ির মন্দির চুড়ো দেখা যায়, প্রতিদিন সন্ধে ৬টা৩৭ মিনিট নাগাদ মন্দিরটায় আলো জ্বলে ওঠে; আমি অপেক্ষা করে থাকি রোজ, ওই সময়ে সেই ছোটবেলার জাহাজের ঝিম লাগা স্মৃতিটা মনে আসে আমার, অনন্ত কাল ধরে কিসের যেন অপেক্ষা করছি আমি, এরম সন্ধে গুলোয় আমার নিতান্ত অপ্রয়োজনীয় লাগে নিজেকে এই বিশ্বাসঘাতকতার স্কয়ার ফিটের মাঝখানে.....।
আকাশে সন্ধ্যাতারা ফুটে ওঠে, আমি লাইটহাউসের মতো একা সমুদ্রে দাঁড়িয়ে থাকি, তোমার প্রেমিকা হয়ে।।


Comments

Popular posts from this blog

Sunday_Motivation... 🌻

নববর্ষ 🌸

প্রেমিকের গন্ধ