Posts

নববর্ষ 🌸

 চৈত্র শেষের সন্ধে নামে বুকে, নতুন একটা লাল গালিচা, ছড়িয়ে পরে পূবে।।  আমপল্লবে সিঁদুররঙের ছোয়া , শুভ গন্ধে আর  আলোয় ভুবন ধোয়া।।  নতুন খাতায় লালচে কয়েন ছাপ, শঙ্খ ধ্বনিতে কেটে যাক সব পুরনো প্রাচীন শাপ।।  কবির কলমে শব্দ আসুক, নির্ঘুমেদের ঘুম, বৈশাখ এসে আলো করে দিক, শত রাত, নিঃঝুম।।

কুয়াশার মত

ভালোবাসা অনেকটা শীতের ভোরে নদীর চরে ছড়িয়ে থাকা পাতলা কুয়াশার আস্তরণের মত, অনেকদূর অবধি দেখা যায়না কুয়াশায়, ভালোবাসার পাতলা আস্তরণের নীচে আমরা ধীরে ধীরে ভুলতে বসি,  বহুদিন আগের ব্যাথার রাত, কিংবা অনেকদিন ধরে না ভুলতে পারা কোনো ফোন নাম্বার। তারপর বেলা বাড়লে একটা মিষ্টি রোদ ওঠে, তাকে গায়ে মাখতে মাখতে আমরা ভুলে যাই, ঠিক কতটা নামল আজকে পারদ। ভালোবাসা অনেকটা এই মিঠে রোদটার মতো, ভুলিয়ে দেয় কার যেন আসার ছিল, আজ ও এলোনা... ভালোবাসা অনেকটা  শীতের সোয়েটারের মতো, গায়ে জড়িয়ে আরাম হয়, তেমনই যখন শুকনো পাতারা শীতের শেষ বেলায় পিচ রাস্তায় প্যারেড করে, আর ওদের শিরশিরে আওয়াজে আমাদের মন খারাপ হয়, ঠিক তখনই একটা ফোন আসে, একটা গলার আওয়াজ, গায়ে জড়িয়ে নিলেই, মন খারাপ কেটে যায় নিমেষে। তারপর সন্ধে নেমে আসে, শহরতলির কোনো রংচটা মনখারাপি বাড়ির গা বেয়ে,  উষ্ণতার সাথে তাল মিলিয়ে ঠোঁট নেমে আসে চায়ের কাপ কিংবা ভাড়ে, ক্ষনিকের জন্য চোখ বুজে আসে আমেজে। ভালোবাসাও এই চায়ের আমেজের মতো, কোনো সন্ধ্যেয় মুখোমুখি বসলে, কবিতা, সিনেমা, থিয়েটার, তর্কের শেষেও পারদের সাথে লড়াইয়ে জিতে যায় আমেজ। তারপর রাত নেমে আসে, লেপের ওমের কাছে হার

খোলা চিঠি।।

একের পর এক মাইলফলক সরিয়ে এগিয়ে যায় জীবন। হোচট খাই, সামলে উঠি, কখনো বা এক দু ঘন্টা বসে থাকি ছাদে গিয়ে। এখন আমার ওড়ার জন্য অনেকটা আকাশ জানো? ডানায় হাওয়া ভরে দেওয়ার বেশ কয়েকজন লোক আশেপাশে। উড়তে কোনোদিনই ভয় পাইনা আমি, শুধু মনে হয় যদি আর মাটিতে ফিরতে না পারি, যদি তোমার চিহ্ন গুলোকে আঁকড়ে বাঁচতে না পারি। সেদিন বাড়ির কোণের নারকেল গাছটা কাটা পড়ল, তুমি নিয়ে এসছিলে ওটা, ভালো 'বাসা'- র যত্নের গাছ, আমার খুব কান্না পাচ্ছিল, তোমার কিছুই কি শেষ অব্দি রাখতে পারবনা আমি?  তুমি বিলীন হয়ে যাওয়ার আগের মিনিট পঁয়তাল্লিশ সময় আমায় বেশ শক্ত করে দিয়েছে জানো? শুধু মাঝে মাঝে পুজোর কুড়ি দিন আগে হঠাৎই যখন সন্ধেবেলার গড়িয়াহাটের সমস্ত আলো আমার চোখে লোডশেডিংয়ের মত লাগে, তখন বুঝি আর কেউ তোমার মত করে ' আমার মেয়ে ' বলেনা তো.. সব আলো, সব ভালোর মাঝে এটুকু অন্ধকার রেখো, যেই অন্ধকার টুকুতে তোমার সাথে নিয়মিত দেখা হবে। দিনের শেষে যেখানে আমি নরম হব একটু, যেটুকুতে জীবনের সব মাইলফলকের সবাইকে মনে থাকবে আমার। যেটুকুতে আমি চাইব; সবার ভালো হোক।।

যে দিনগুলোয় 💔

ক্যালেন্ডারে এমন কতগুলো দিন আসে. যে দিনগুলোয় খুব শীত করে, যে দিনগুলোয় হালকা আতরের গন্ধ থাকে, যে দিনগুলোয় কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই বৃষ্টি আসে তুমুল, যে দিনগুলোয় হলদে পাতারা ঝড়ে পড়ে ব্যথায়, যে দিনগুলোয় কথা রাখেনা সবচেয়ে প্রিয় জানলাটাও, যে দিনগুলোয়, যার সাথে রাজনৈতিক টানাপোড়েন আলোচনা হতো একদিন, আজ তার জন্য ধুপ ফুল নিয়ে বাড়ি ফিরি, যে দিনগুলোয় খুব ভোরের দিকে ঘুম ঘোরে একটা ফোন আসে, জানতে পারি, মাঝসমুদ্রে নৌকায় জল ঢুকছে আমার, যে দিনগুলোয় সাঁতার না জানা একটা মেয়ে হঠাৎই সাঁতার শিখে যায়, যে দিনগুলোর গায়ে, শিকড় উপড়ানোর যন্ত্রনা জড়ানো থাকে, যে দিনগুলো উদযাপন করতে হয়, শুধু সেদিনের কালসিটে দাগ টা ভুলতে চাইনা বলে, যে দিনগুলোয় লিখতে বসি, আজ আর তাকে কিছু দেওয়ার নেই বলে।। যে দিনগুলোয় "ভালো থেকো" লেখা একটা চিরকুট উড়িয়ে দি, কোনো এক না পৌঁছনোর ঠিকানায়।। 

অমলতাসের নীচে

ছন্দ অমিল কবিতাদের সারি, ব্যস্ত শহর, মানায়না আর ট্রাম ও; থমকে যাওয়া অমলতাসের নিচে, হয়না দেখা, আসেনা নীল খাম ও। আমরা এখন ঘোরতর সংসারি, দরদাম করি, গড়িয়া হাটের মোড়ে; তবুও কখনো আষাঢ় সন্ধেবেলা, গুলোয় হিসেব তোমায় মনে পড়ে। মুঠোফোন ও জানিয়ে গেছে কবেই, এই ঠিকানায় উত্তর নেই আসার; তবুও আমরা দুজনই অপেক্ষমান, আসবে চিঠি, হঠাৎ ভালোবাসার। কাঠগোলাপে মুখ ঢেকেছে শহর, ক্লান্ত দুপুর, দীর্ঘ ফেরির ডাকে, তোমার চিঠি লুকিয়ে পড়ি, লোকাই; সঞ্চয়িতার অচেনা এক ফাঁকে। ফুরিয়ে গেছে সব কবিতার খাতা, জল জমেছে, অন্তমিলের পাড়ায়, তুমি আমায় ছেড়ে যাওয়ার পরে, কদম ফুলের গন্ধ ভাসে হাওয়ায়। ভাবতে থাকি আবার দেখা হবে, একই ছাতায়, একই রকম ভিজে, এমনই কোনো আষাঢ় সন্ধেবেলা, ফুরিয়ে আসা অমলতাসের নিচে।

তবু তুই রয়ে গেলি....❤️

অনেকটা পথ চলে এলাম হাঁটতে হাঁটতে, লাল সিগনালে দাঁড়িয়ে পড়া আর সবুজ সিগনালে জেব্রা ক্রসিং ধরে নিয়ম মেনে রাস্তা পার হওয়া মেয়েটার সিলেবাসে তুই খানিকটা out of syllabus ই বটে।  তবু তুই রয়ে গেলি; আটটা পাঁচটার অফিস, রবিবারের চিকেন, শীতের দুপুরের চোখ ঝা ঝা করা রোদ্দুর আর একের পর এক ভেঙে পড়া সম্পর্কের কংকালের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা আমার সাদা মাটা মফস্বলী জীবনের একটা ধুন্ধুমার ভালোবাসার গল্প হয়ে রয়ে গেলি তুই... তবু তুই রয়ে গেলি; শহরের কঠিন অসুখ, রোজনামচার অনিশ্চয়তা, সাহারায় তুষারপাত, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, চিমনি বেয়ে আমাদের গিলতে আসা কালো ধোয়া পেরিয়ে আমার চারতলার 2bhk ফ্ল্যাটের একফালি দক্ষিণী বারান্দা হয়ে রয়ে গেলি তুই... তবু তুই রয়ে গেলি,  আমার রাগ, জেদ, অভিমান, ছেলেমানুসি, কথা কাটাকাটি, হেরে যাওয়া, উঠে দাঁড়ানো, ফিরে তাকানো, কথা না রাখার মাঝে এক মুঠো সুনীল গাঙ্গুলী হয়ে রয়ে গেলি তুই...

ডিসেম্বরের চোদ্দ সেদিন

Image
এরমই এক ডিসেম্বরের চোদ্দ সেদিন, এক পৃথিবী লিখব বলে তখন আমি ঘর ছেড়েছি; নীলচে সবুজ পৃথিবীটার কোনো কোণায় থাকবো পড়ে, একাই বাঁচবো, একাই পাহাড় ডিঙিয়ে যাব। গ্লেনারীস বা ফুটের দোকান, যখন যেমন ইচ্ছে হবে, লিখব সবই লিখেই যাব। আমি তখন মেঘবালিকা, এই শহরে আমার জন্য তখন কারোর অপেক্ষা নেই। পিছুটানহীন শীতের রোদে, আদিগন্ত আকাশ আমার, শুধুই আমার। বাঁধ সাধল একটা ছেলে, হাজার বছর যে ছেলেটা এক পৃথিবী লিখেই গেছে, ছড়িয়ে গেছে সেসব চিঠি আদিগন্ত আকাশ জুড়ে; মেঘবালিকার সাধ্যি কোথায় সেসব চিঠি ফিরিয়ে দেওয়ার? মেঘবালিকা তখন ও যে একটা খাতাও শেষ করেনি। অগত্যা সেই ঘর বাঁধল মেঘবালিকা। উঠোন জুড়ে খসে পড়ল ডিসেম্বরের সব তারারা। বহু যুগের চুপ থাকা সব কবির খাতায়, হঠাৎ করেই বৃষ্টি এল ডিসেম্বরে। ওদের তখন ঘরের ভেতর হাজার হাজার নীল জোনাকি। যেই আলোতে হারিয়ে যাচ্ছে মেঘ বালিকার একলা বাঁচা.. ভরে উঠছে একলা থাকা কবির খাতা। বলছে ওরা  কালকে থেকেই শহর জুড়ে শীত আসবে জাকিয়ে এবার। ভাববে দুজন, এক পৃথিবী লিখব এবার দুজন মিলে, এক পৃথিবী লিখতে বসে একটা খাতাও শেষ হবেনা। কারণ, ডিসেম্বরের চোদ্দ তারিখ, এরমভাবেই;  খাতার ওপর অঝোর ধারায় বৃষ্টি  হবে।।