বেরু বেরুর হিজিবিজি🚌
রাত্তির তখন ২টো ৩৫, বাসটা থামল আওয়াজ করে,বাসের জানলার বাইরে চোখ রেখে দেখলাম পূর্ব বর্ধমানে আপনাকে স্বাগত, চোখ কচলে মনে পড়ল একটু আগেই ওনার সাথে হোয়াটসঅ্যাপ এ একটা একতরফা একটা ঝগড়া করে এসেছি, কারণ আমার এই কমবয়েসী তীর্থ ভ্রমণের পথে, হাজার হাজার মাইল দুরত্বে থাকা আমার তিনি তার অনলাইন সান্নিধ্য না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, যদিও এখনো আমরা প্রেম পর্যায়েই।
আমার সহযাত্রীরা ঘুমে মগ্ন, ওপাশের সিটে ষাটোর্ধ্ব দিদাটা, দাদুটার গায়ের চাদরটা বেশ করে টেনে দিল, আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো, ওদের সাথে আমার খুব ভাব হয়েছে। ওদের নাম দিয়েছি মিষ্টি দাদু দিদা। ঠিক আমার মনের মত, একসাথে থাকার অভ্যেসটা কে ও ওরা অভ্যেস করে ফেলেছে।
সকালে বৌদি ফোন করেছিল, দাদা একটা বাচ্চা চায়, নয়তো ডিভোর্স, পাগলের মত করছিল মেয়েটা,অ্যাডপ্ট ও করতে নারাজ। অথচ আজ থেকে বছর দশেক আগে প্রেম সেরে বিয়েতে এসে দাঁড়িয়েছিল ওরা, লাল রং টা বোধহয় ফিকে হয়েছে অনেকটা, আমি ও অপারগ হয়েই বললাম ফিরে এসে বসব সবাই, কিন্তু ভাঙনের আওয়াজ টা বেশ স্পষ্ট। এইসব ভাবতে ভাবতে রাতটা পরিষ্কার হয়ে এলো, ম্যাসান্জোরে পৌঁছলাম আমরা।
লালমাটি, মামা ভাগ্নে পাহাড় বেয়ে খানিকটা উঠে আসা, সবজে টিয়ার দল, মুচমুচে ফুচকা, জলের আওয়াজ আর মিষ্টি দাদু দিদার সাথে দিব্যি কাটছে, যাত্রা অব্যাহত.... 😌
দুপুরের খাওয়ার পর আবার পরের গন্তব্যের দিকে, বাসের একপাশের জানলা গুলোয় সূয্যিমামা ভীষণ ভাবে প্রকট। মিষ্টি দাদু এবার পর্দা টেনে রেখেছে, মিষ্টি দিদা কে রোদ থেকে বাঁচাতে.. হাইওয়ের হাওয়া, ঝড়ের গতিতে গাড়ি জীবনের লাল নীল গল্পগুলোকে ভীষণ ভাবে ঝাপসা করে দিচ্ছিল মাঝে মাঝে। তারপর রোদ ছায়া ডিঙিয়ে পৌঁছলাম ত্রিকূট পাহাড়ের ঢালে। অনেক সিঁড়ি আর বানরদের রাজ্য ডিঙিয়ে দেবদেবীর চরণ ছুঁয়ে ফিরলাম আরেক হনুমান রাজত্বের তপোবনে, ওদের ফিচলেমি দেখে বেশ বোঝা যায় ওরাই আমাদের আদি রূপ...
কেনাকাটা, টক ঝাল, বাঁদর দের খাওয়ার কেড়ে নেওয়ার ট্যাকটিস, অলিগলির মন্দির এসব দেখেই দেওঘরের দিন কাটলো আমার...
ইতিমধ্যে বাসের অনেক পুঁচকে আর সমবয়সীদের সাথেও ভাব জমেছে। তারাপীঠের পথে, সে কী আড্ডা!! এদিক্বার হোটেলটায় আবার বেশ পছন্দের একটা ব্যালকনি পেয়েছি আমি। নীচের গলির চাউমিনের গন্ধ আর একটু দূরেই মন্দির মসজিদের চূড়া একসাথে দেখতে পাওয়া আর কানে ভেসে আসা আর.ডি.বর্মন ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যেটাকে অনন্য করে তুলেছিল। ভোরের সূয্য দেখেই মনে পড়ল নিয়ম মেনে আজ ফেরার পালা, খোলসের কাছে।
যে টোটো কোম্পানির সাথে গেসলুম তাদের সব্বার আপ্যায়নকে আর সহযাত্রী দের ধন্যবাদ জানালাম। অনেক নতুন গল্প দেখলাম এই তিনদিনে।
উপড়ি পাওনা হাইওয়ের হাওয়া, মিষ্টি দাদু দিদা, ধাবার আলুর পরোটা, লস্যি আর মালাই চা। আবার কবে দেখা হবে এইসব ভেবে বাসে সবাই নাচগান করছে "ললিপপ লাগে লু" আমি ছাইপাশ লিখে চলেছি আর ঐ রোড ডিভাইডারের বোগেনভিলিয়াদের থেকে এক্সট্রা অক্সিজেন চেয়ে নিচ্ছি, কাল সোমবার যে... হেডফোনে গান বাজছে- " হামনে ভী তেরী হার ইক গাম কো, গালে সে লাগায়া হ্যায়, হ্যায় না ??..."
Comments
Post a Comment