আম-কাহিনী
ধর্মতলার ট্রামলাইনটার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ই গন্ধটা নাকে এল অরুপবাবুর...পাকা আমের গন্ধ..এবছরই রিটায়ার্ড হয়েছে..খুব একটা বেরোনো হয়না আর..আজ একটা জরুরি কাজে আবার একবার কলকাতার ব্যস্ত রাস্তায়..কাজ মিটে গেছে..গন্ধটা নাকে নিয়েই বাস ধরলেন অরুপবাবু..গন্ধটা পুরনো কথা মনে করিয়ে দিল..বাসের জানলায় চোখ রেখে হঠাতি তাকে মনে পড়ল..তখন অরুপবাবু ক্লাস সেভেনে..বন্ধুদের সাথে গরমের ছুটিতে পাশের পাড়ায় রায়চৌধুরী বাড়ির আমচুরি তার রোজনামচা...কাঁচা হোক আর পাকা..স্বাদে অতুলনীয়..ভালোই চলছিল..হঠাতি একদিন গাছ থেকে পড়ে এক যা তা কাণ্ড..বন্ধুরা সব পগারপাড়.. বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল..একটি ফ্রক পড়া মেয়ে..তার থেকে একটু ছোটই হবে...বলল- "কী বাবা কে ডাকব??বন্ধুরা সব পালাল তো??ভাল্লুক আর দুই বন্ধুর গল্প পড়নি??আজ টের পেলে তো??এবারের মত ছেড়ে দিলাম..আর যেন এ গাছের কাছে..."বলে থেমেছিল..
অরুপবাবু ও সলজ্জ দৃষ্টিতে স্থান পরিত্যাগ করেছিলেন..আর কখনই ঐ গাছতলায় যাননি...তারপর আর সেই মেয়েটির সাথেও দেখা হয়নি...
বহুবছর পর আবার দেখা হয়েছিল রায়চৌধুরী বাড়ির ড্রইংরুমে..অরূপবাবুর বিয়ের পাকা কথার দিন..আর ফ্রক না লাল শাড়িতে সুসজ্জিত সেই মেয়েটি হাতের ট্রে টা টেবিলে নামিয়ে বলেছিল- "বাবা..তোমায় তো বলাই হয়নি..উনি আমাদের গাছের আম খেতে খুব ভালোবাসেন..কী তাইতো অরূপবাবু?" অরূপবাবু সেদিনও সলজ্জ দৃষ্টিতে চুপ রইলেন...
তারপর আজ আঠাশটা বছর সেই মেয়েটিই অরূপবাবুর জীবনসঙ্গী..
কন্ডাকটার টিকিট চাইতেই সম্বিত ফিরল অরূপবাবুর..আপনমনে হেসে উঠলেন...পরশু জামাইশষ্ঠী..মেয়ে জামাই এসেছে...গিন্নী বাড়ি থেকে বেরোবার সময় বারবার বলেছে ভালো দেখে আম আনতে...নাতনীটাও আদো আদো কথায় বলেছে... দাদু... mango🍋
Comments
Post a Comment