পুতুল-কথা
আমি একটা পাথরের রঙীন পুতুল..গা টা শক্ত হলেও পা দুটো ল্যাতপ্যাতে..তাই এক জায়গায় বসালে..পা ঝুলিয়ে চুপ করে বসে থাকি..ভালোই ছিলাম..মধ্য কলকাতার এক কাঁচ ঢাকা দোকানে..বন্ধুবান্ধব নিয়ে..নিজের খুব কাছের মানুষটার পাশে পা ঝুলিয়ে বসে ছিলাম..আমায় আবার একা কেনা যায়না..আমার সঙ্গীনীকেও কিনতে হয়..তাই একা হওয়ার ভয় বিলকুল ছিলনা..
এরপর একদিন...সেদিন বছরের প্রথম দিন..ভীরে ঠাসা শহর..একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল দোকানের সামনে..আমাদের মতই মিষ্টি..পার্থক্য এই যে..সে কথা কয়...
আমাদের দেখে সে তো আত্মহারা..এটা ওটা সেটার পর আমাদের দুটিকেই পছন্দ হল..কাগজে মুড়ে ব্যাগে চালান হওয়ার আগে শুনেছিলাম..জোড় ভেঙে মেয়ে পুতুলটিকে উপহার দেওয়ার ইচ্ছা...আমার ওনার তো বেজায় মন খারাপ..আমারও..তবু জানাতে পারবনা..সেদিন থেকে ওই তো আমাদের মালিক..তাও আবার অত মিষ্টি মালিক..নাহ মালিকটা খারাপ শোনায়..ধরি ওর নাম রিয়া...তারপর ওর বাড়ি এলাম..
আমাদের ছবি তুলে..আদরে মুড়ে..শোকেসে টুপ করে বসিয়ে দিল...খেয়াল করলাম..দুপুরের খুশিটা আর নেই রিয়ার..
বেশ কিছুদিন পর..আমার পাশের জনকে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম বেশ দোটানায়..কথা ছিল যাকে দেবে..সে আর রিয়া এক হয়ে গেলে..আমরাও মিলব আবার..তবু দোটানা দেখে আমার বেশ ভয় হল...
সত্যিই গল্পটা বদলে গেল..দিন..মাস..চোখের জল..এসব এক করে বুঝলাম..আমার পাশের জন হারিয়ে গেছে..আমিও ধূলোয় ঢাকলাম..অনাদরে..রিয়া মাঝেমধ্যে তাকায়
অপরাধীর মত..ছলছলে চোখটা..আমার বেশ খারাপ লাগত..নকল হাসিতে ঢাকত..পারতনা ঠিক...
এরপর বড়দিনের আগের দিন..ওকে হাসতে দেখলাম..সেই প্রথম আলাপের মত..কান পেতে শুনলাম..ওর ছোট থেকে সান্তাক্লস সাজার খুব শখ..ছোটদের পুতুল দেওয়ার..এবার নাকি..অফিসের কাছের ফুটে বসে থাকা পুচকেটাকে একটা পুতুল দিয়েছে..ওর খুশী দেখে রিয়াও খুশী..আর ওকে দেখে আমি..তার দুদিন পর দেখি অফিস থেকে ফিরে আমায় নামিয়ে ধুলো ঝেড়ে..আদরে মুড়ে নিল..বলল sorry রে..তোকে একা করে দেওয়ার জন্য..জানিস..পুচকেটা আমার পুতুলটাকে কত্ত যত্নে রেখেছে..তোকেও আমি যত্নে রাখব এবার থেকে...
আমি তো আবার কথা বলিনা..নাহলে বলতাম...পুরনো কথা আমিও ভুলে গেছি...তুমি চাইলে আমার পাশে পা ঝুলিয়ে বসতেই পারো....বলা হলনা..❤️
Comments
Post a Comment